মাইদুর রহমান রুবেল | মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট | 188 বার পঠিত
বাবার সাথে হাট থেকে ফিরছে মন্টু। কিছুক্ষন আগে মাাগরিবের আযান হয়েছে। আমাবস্যার রাত, এরই মধ্যে মেঘলা আকাশ। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। বাবা মন্টুকে বলছে দ্রুত পা চালা। যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে। বৃষ্টির আগেই বাড়ী ফিরতে হবে। বাবার সাথে তাল মিলিয়ে হাটতে পারছেনা মন্টু। বাবার বড় বড় পায়ের সাথে তার ছোট পা। গতি মিলে না। বাবা দ্রুত হাটছে। মন্টু আস্তে দৌড়াচ্ছে বাবার পিছু পিছু। বাবার দ্ইু হাতে ব্যাগ। এক হাতে ইলিশ মাছ অন্যহাতে তরকারি। বাড়ির দূরত্ব এখনো হাফ কিলো।
হাটছে তো হাটছে কিন্তুু পথ ফুরাচ্ছে না। ঘটনা কি বুঝতে পারছেনা মন্টুর বাবা শামসু মিয়া। এরই মধ্যে দমকা হাওয়া বয়ে যায় তাদের উপর দিয়ে। পুরো শরীর শীতল হয়ে যায়। দাড়িয়ে যায় গায়ের লোম। ছমছম করে উঠে গা। বাবা ছেলে দাড়িয়ে যায় হাটা বন্ধ করে। মন্টু জানতে চায় কি হয়েছে বাবা। ছেলে যাতে ভয় না পায় বিষয়টা চেপে যায় সে। আবার হাটা শুরু করে।
রাস্তার পাশে থাকা বাশ বাগানটা কড়মড় করে উঠে। কোথাও বাতাস নেই। তবু দুলছে বাশ বাগান। মূহর্তেই বাড়ছে দুলার মাত্রা। বাবা ছেলে তাকিয়ে দেখছে কি ঘটতে চলেছে। মনে হচ্ছে বাশ বাগানের উপর দিয়ে তুপান বয়ে যাচ্ছে। বাশের মাথা মাটিতে পড়ে যাচ্ছে, আবার উঠছে। কড়মড় আওয়াজ বাড়ছে। মনে হচ্ছে কারো হাড় গোড় ভেঙ্গে দিচ্ছে কেউ। ভয় পেয়ে যায় মন্টু। বাবার কাছে জানতে চায়, কি হয়েছে।
-ছেলেকে অভয় দিয়ে বলে, কিছু হয়নি চল বাড়ী যাই।
বাশ বাগানটা এমন করছে কেন?
-ও তুই বুঝবি না বাবা। চল বাড়ী যাই।
মনে মনে সব দোয়া দুরূদ পড়তে শুরু করেছে শামসু মিয়া। যত দোয়া মনে পড়ছে দ্রুত সব পড়ছে। দুই হাতে বাজারের ব্যাগ। ছেলেকে এবার সামনে রেখে এগিয়ে চলছে সে। সামনে দিয়ে কিছু একটা দ্রুত চলে গেলো। বুঝেেত পারলো না বাপ বেটা কেহই। মন্টু দেখতে পেলো দ্রুত সাদা কিছু একটা চলে গেলো। ভয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো সে। শামসু মিয়া বুঝতে পারলো বড় একটা বিপদে পড়তে যাচ্ছে সে।
খুবই সাহসী শামসু মিয়া নিজে ভয় পাচ্ছে না তবে ছেলের জন্য চিন্তা হচ্ছে তার। যদি কিছু একটা হয় তার স্ত্রীকে কি জবাব দেবে। একটা মাত্র ছেলে তার। হাটতে শুরু করেছে আবার। এবার শামসু মিয়ার ইলিশ মাছের ব্যাগে টান লাগে। মনে হচ্ছে পেছন থেকে ব্যাগটা কেউ টেনে ধরেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে কেউ নেই। পেছনে ঘুুরতেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। রাস্তার বাম পাশে সারি সারি বাড়ি। আলো জ্বলছে নিভছে। বাড়ী গুলোর উপর সাদা নিশান লাগানো। সড়কে কোন বাতাশ না থাকলেও প্রচন্ড বাতাশে পতপত করে উড়ছে নিশান।
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মন্টু আর তার বাবা শামসু মিয়া। তাজ্জব ব্যাপার। মাত্রই তো এই পথ পারি দিলো তারা। তখনতো কোন বাড়ী চোখে পড়লো না। মূহর্তেই এমন সুন্দর বাড়ী আসলো কোথা থেকে। মাথায় ধরছে না শামসু মিয়ার। অদ্ভুত এমন ভূতুঢ়ে কাণ্ডে অপ্রস্তুত বাপ-বেটা। বাড়ীগুলো থেকে ক্যমন একটা পচা গন্ধ আসছে। নাকে লাগছে গন্ধটা। ক্রমেই গন্ধটা বিকট হচ্ছে। মনে হচ্ছে বমি চলে আসবে। পেটে নাড়ি ভুড়ি গুলিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে চোখ টলমল করছে মন্টুর। যে কোন সময় কেঁদে ফেলবে।
ছেলেকে বলে কিছু হয়নি চল বাবা বাড়ী চল। ঘুুরতেই কি একটা নেমে এলো আকাশ থেকে। সাদা কাপড় পড়া লম্বা একটা ভূূত। ধীরে ধীরে কিছুটা ছোট হয়ে আসলো। তাও দশ ফিটের কম নয়। হাতে লম্বা তলোয়ার। মনে হচ্ছে এক কোপে মুন্ডু কেটে ফেলবে। ছেলেকে সামলে নেয় শাসমু। বলে সরে যাও সামনে থেকে আমি ভূূতের ভয় পাই না। ভূতটা নাকে বেজিয়ে বলে মাঁছেঁর ব্যঁগঁটা দিঁয়েঁ দাঁও আঁমিঁ পঁথঁ ছেঁড়েঁ দিঁচ্ছিঁ।
-না আমি কিছুতেই মাছের ব্যাগ দিবো না। কারন এই মাছ আমার ছেলের পছন্দ। তার জন্য কিনেছি। তোমাকে দেবো না। ভালো চাও তো সরে যাও।
কিছুতেই পথ ছাড়বে না এই লম্বু ভূত। তার মাছ চাইই চাই।
শামসু মিয়াও অনড় মাছ দেবে না। কি করা যায় ভাবছে। মাথায় বুদ্ধি এলো আগুন জালানোর। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে এক শলাকা মুখে দিয়ে দেয় আগুন জ্বালিয়ে। সামনে থাকা খড়ের মধ্যে ছুড়ে ফেলে দিয়াশলাইয়ের কাঠি। জ্বলে উঠে আগুন। দুই ব্যাগ এক হাতে নিয়ে আগুনের কুন্ডলি বানিয়ে ছুড়ে মারে লম্বুু ভূতের গায়ে। লম্বা পায়ের লোম পুড়ে যায় ভূূতের। লাফিয়ে পেছনে সরে যায় ভূত।
অগুনে সবচে বেশি ভয় ভূূতের। আগুন ছড়িয়ে দেয় শামসু মিয়া। সারি সারি ভূূতের বাড়িতে লাগিয়ে দেয় আগুন। মূহর্র্তেই জ্বলে পুড়ে যায় সব। ল¤ু^ ভূত আকাশের দিকে উঠে যেতে যেতে বলে কাঁজঁটা ভাঁলোঁ কঁরলিঁ নাঁ। আঁমিঁ এঁর শোঁধঁ নেঁবোঁ।
মাছের ব্যাগে থুুতু দিয়ে মন্টুকে নিয়ে বাড়ীর পৌছে মন্টু। বলে বাবা আমি আর তোমার সাথে বাজারে যাবো না। আর কখনো বায়না করবো না এটা ওটার জন্য। আমি না গেলে তোমার সময় নষ্ট না করলে তুমি দিনে দিনে বাড়ী ফিরতে পারতে। তবেই তো আর বিপদ হতো না।
মাইদুর রহমান রুবেল: লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক
Posted ১:৪৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩
banglapostbd.news | Rubel Mia
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
৭৮/৩ কাকরাইল, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০।